Tuesday 7 December 2010

ইবিতে শিবির ও ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় আহত ৩০ : প্রক্টরসহ পাঁচ শিক্ষক লাঞ্ছিত

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগ, জাসদ ও ছাত্রমৈত্রীর সশস্ত্র হামলায় গতকাল ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলায় শিবির ও ছাত্রদলের সভাপতিসহ ৩০ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে শিবির সভাপতি শাহিনুর রহমান ও সাদ্দাম হোসেন হলের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদের অবস্থা গুরুতর। হামলা থামাতে গিয়ে প্রক্টরসহ লাঞ্ছিত হয়েছেন পাঁচ শিক্ষক। হামলায় ছাত্রলীগ, জাসদ ও ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারাও যোগ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদল কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. সাইদুর রহমানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত্ করতে আসেন। সাক্ষাত্ শেষে তারা বেরিয়ে যাওয়ার পথে দুপুর ১২টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা এ সময় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। হামলায় ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুকসহ (আইন মাস্টার্স), জিয়া (অর্থনীতি প্রথম বর্ষ), তুহিন (ইসলামের ইতিহাস চতুর্থ বর্ষ), রতন (আইন চতুর্থ বর্ষ), রাজু (ফলিত রসায়ন), আনিস (ইসলামের ইতিহাস মাস্টার্স) সোহেলসহ ১০ জন আহত হন।
এরপর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে ক্যাম্পাস ঘুরে টেন্টে অবস্থানরত শিবিরের ওপর হামলা চালায়। হামলায় শিবির সভাপতি শাহিনুর রহমান (আইন মাস্টার্স), সাদ্দাম হোসেন হল সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদুর রহমান (আল-হাদিস চতুর্থ বর্ষ), জিয়া হল সভাপতি হাবিবুল্লা খান মাসুম (রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন চতুর্থ বর্ষ), বঙ্গবন্ধু হল সভাপতি নূরুদ্দীন জামি (হাদিস চতুর্থ বর্ষ), মোকাদ্দাস (আল-ফিকহ তৃতীয় বর্ষ), আনোয়ার (দাওয়াহ চতুর্থ বর্ষ), মেজবাহ (আল-হাদিস মাস্টার্স), আবদুর রহিম (দাওয়াহ মাস্টার্স), নোমান (আরবি প্রথম বর্ষ), মামুনসহ (ইলেকট্রনিক্স) ২০ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিত্সা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে শিবির সভাপতি শাহিনুর রহমান ও সাদ্দাম হল শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদুর রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিত্সা কেন্দ্রের ডাক্তার মো. পারভেজ হাসান বলেন, শিবির সভাপতির মাথার হাড় ফেটে যাওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হামলার পর ছাত্রশিবির আবাসিক হলগুলোতে এবং ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। দুপুর ১টার দিকে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, জিয়া পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. রুহুল আমীন ভূঁইয়া ও গ্রিন ফোরামের শিক্ষকরা প্রক্টর মাহবুবুল আরফিন ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. সাইদুর রহমানকে ডেকে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানান।
এ সময় প্রক্টর ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত ও হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। শিক্ষকদের এ সমঝোতা চলাকালে ছাত্রলীগ, জাসদ, ছাত্রমৈত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা একজোট হয়ে সাদ্দাম হোসেন হলে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিবিরকর্মী ও হলের আবাসিক ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় শিক্ষকরা ছাত্রলীগ, জাসদ ও ছাত্রমৈত্রীর নেতাকর্মীদের হামলা থেকে নিবৃত করতে গেলে তাদের হাতে অধ্যাপক নজিবুল হকসহ তিন শিক্ষক লাঞ্ছিন হন। এরপর বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান আলী ও ট্রেজারার মাহবুবুল আরফিন ঘটনাস্থলে এলে তাদেরও ছাত্রলীগ লাঞ্ছিত করে।
ছাত্রদল ও শিবিরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদল বেলা ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী শান্তিডাঙ্গায় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি আটকে দেয়। এ সময় ছাত্রদলের সমাবেশ থেকে হামলার প্রতিবাদ, দোষীদের বিচার দাবি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়।
কুষ্টিয়া সদর সার্কেলের এএসপি সিএ হালিম বলেন, আমরা ক্যাম্পাস শান্ত রাখার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।
প্রক্টর মাহবুবুল আরফিন বলেন, হামলা ঠেকাতে গিয়ে আমি নিজে ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়েছি। চেষ্টা করছি সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান আলী হামলায় শিক্ষক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদের অংশগ্রহণ করতে দেখিনি।
হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শহীদ মোহাম্মদ রেজওয়ান, জিয়া পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, ড. রুহুল আমীন ভূঁইয়া, গ্রিন ফোরাম সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আফাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ড. আছম তরিকুল ইসলাম, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতারা।
সাদ্দাম হোসেন হল তল্লাশি রাত সাড়ে ৮টায় শেষ হয়। হল তল্লাশি করে কিছুই পায়নি পুলিশ। হলের আবাসিকতা না থাকায় ৫০ ছাত্রকে হল প্রভোস্টের জিম্মায় নেয়া হয়েছে। তাদের যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট ড. আনোয়ার হোসেন।

No comments:

Post a Comment