Monday 6 December 2010

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চূড়ান্ত তালিকায় আছেন আ.লীগের বিত্তবানেরা!

জহুরুল ইসলাম, গৌরনদী (বরিশাল) |


বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় হতদরিদ্রদের পুনর্বাসনের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে বিত্তবান আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর, মাহিলাড়া, বাটাজোর ও নলচিড়া ইউনিয়নকে এ প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রতি গ্রামের ৬০ জন করে চারটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের এক হাজার ২০০ উপকারভোগী পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। নীতিমালা অনুযায়ী গ্রামের হতদরিদ্র বিধবা, যার শুধু বসতভিটা আছে, ভূমিহীন হতদরিদ্র ও ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকেরা এ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার কথা।
তালিকা তৈরির কাজে যুক্ত জনৈক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তালিকা তৈরিতে তাঁরা নীতিমালা অনুসরণ করতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতারা কাজ বন্ধ করে দেন। পরে তাঁরা নিজেরাই তালিকা করে তাঁদের স্বাক্ষর নেন। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী গ্রাম থেকে তালিকাভুক্ত হয়েছেন মো. শাহজাহান কবির। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। তালিকায় রয়েছেন তাঁর ভাই হাবিব হাওলাদার, জালাল হাওলাদারসহ কয়েকজন আত্মীয়স্বজনের নাম। এ বিষয়ে শাহজাহান কবির বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আমার অবস্থান আছে, কিন্তু আর্থিকভাবে আমি সচ্ছল নই।’ পিংলকাঠী গ্রামের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, ‘মোগে নেতাই যহন গরিব, তহন তালিকায় মোগো নাম না থাহাই ভালো। নিজেরা আগে খাইয়া পায় না দিশা, তারা আবার মোগো সেবা করার কতা কয়।’
তালিকায় আছেন নলচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ব্যবসায়ী বাদশা ফকির, নলচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি অভিজিৎ ভট্টাচার্য, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কালাম খান, আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম হাওলাদার, ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রাম্য মাতবর সেলিম মল্লিক, পিংলাকাঠী বন্দরের ইজারাদার হাসান মল্লিক, নলচিড়া গ্রামের শান্তিরঞ্জন অধিকারী, নলচিড়া বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল খান। তালিকায় নাম থাকা প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, প্রকল্পটি নেতা-কর্মীদের স্বাবলম্বী করার জন্য, হতদরিদ্রের প্রকল্প কি না, তা তাঁদের জানা নেই।
এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছেন বাটাজোর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ তালুকদার, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্যাবসায়ী মোনায়েম খান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম মৃধা, কার্যকরী কমিটির সদস্য মানিক বাঘল, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যাবসায়ী আশ্রাব আলী সিকদার। মানিক বাঘল বলেন, কোনো কোনো নেতা প্রভাব খাটিয়ে বিত্তশালীদের তালিকাভুক্ত করেছেন, এ কথা সত্য। মোনায়েম খান বলেন, ‘যতদূর জানি, তালিকাভুক্ত করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।’
গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি তাঁর গ্রামের হতদরিদ্রদের একটি তালিকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় ওই সব নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সেখানে নীতিমালা লঙ্ঘন করে ধনী শ্রেণীর লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা থাকায় এ ব্যাপারে আমার পক্ষে কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কালীয়া দমন গুহ বলেন, এ জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা দায়ী।

No comments:

Post a Comment