Tuesday 7 December 2010

খুলনায় আ’লীগ নেতার নেতৃত্বে হাসপাতালে তাণ্ডব : দু’ঘণ্টা চিকিত্সা কার্যক্রম বন্ধ

খুলনা অফিস

ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার প্রত্যক্ষ মদতে সন্ত্রাসী তাণ্ডব, হুমকি ও জোরপূর্বক ঘর নির্মাণের কারণে গতকাল সকালে রূপসা উপজেলার তিলকে অবস্থিত রেভা. আবদুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিত্সা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীসহ ভর্তি রোগীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। পরে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় দু’ঘণ্টা পর আবার চিকিত্সা কার্যক্রম শুরু হয়।
এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সকাল আনুমানিক সোয়া ৯টায় উপজেলার টিএসবি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাধন মিত্র হাফিজা নামে এক মহিলাসহ লোকজন নিয়ে হাসপাতালের অফিস রুমে যান। এ সময় তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যোগেন সরেন ও সমন্বয়কারী মহাসিনকে পেলে কোপাবো। এরপর তিনি গালাগাল করতে করতে বেরিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর হাফিজার ভাই সলেমান গং লাঠিসোটা নিয়ে হাসপাতাল বাউন্ডারির ভেতরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ঘর তুলতে থাকে। এ সময় তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আবারও গালাগালসহ ত্রাস সৃষ্টি করতে থাকলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী এবং ভর্তি রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত চিকিত্সকরা এ অবস্থায় তাদের পক্ষে চিকিত্সা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সকাল ১০টার দিকে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়। পরে রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ফলে দু’ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুপুর ১২টা থেকে আবার হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মফিজুল হক, পরিতোষ পাল, সারাফত হোসেন বলেন, হাসপাতালে যে তাণ্ডব চলেছে তাতে এখানে আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। এ অবস্থায় এখানে কাজ করা যায় না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা যোগেন সরেন বলেন, সাধন মিত্র অহেতুক এসে আমাদের ওপর চড়াও হন। তিনি বলেন, ২০০২ সালের দিকে সলেমান গংয়ের ৪৯ শতক জমি হাসপাতালের প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়। জমির মূল্য হিসেবে ৮ লাখ টাকাও জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা করা হয়। কিন্তু তাদের কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে টাকা তুলতে না পারায় মানবিক কারণে আমরা সলেমান গংকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা প্রদান করি।
এ ব্যাপারে সাধন মিত্র বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি আমি হাসপাতালেও যাইনি। আমাকে অহেতুক জড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, হাফিজাদের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত তিনদিন ধরে গোলমাল ও সালিশ দরবার চলছে।
আবু নাসের হাসপাতালে দুর্ধর্ষ চুরি
এদিকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। চোরেরা হাসপাতালের ২২৪ ও ২২৫ নম্বর হিসাব বিভাগের কক্ষ ভাংচুর করে দেড় লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে চুরির এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় খালিশপুর থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে চোররা হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের দোতলার ২২৪ ও ২২৫ নম্বর কক্ষের হ্যাজবোল্ড ভেঙে আলমারি ও ফাইল কেবিনেটের কাগজপত্র তছনছ করে। ২২৪ নম্বর কক্ষের হিসাবরক্ষকের আলমারি ভেঙে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং একই কক্ষের ক্যাশিয়ারের ড্রয়ারে থাকা ১০ হাজার ৬শ’ টাকা নিয়ে যায়।
হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিনের মতো গতকাল সকাল ৮টায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান হাসপাতালে আসেন। তিনি হাসপাতালের দোতলায় ২২৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখেন তালা ভাঙা। একই অবস্থা দেখেন ২২৩ ও ২২৪ নম্বর কক্ষের। তিনি বলেন, গভীর রাতে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে রাতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে পুলিশ, আনসার ও নৈশ্যপ্রহরীরা ডিউটিতে ছিল। এ ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।

No comments:

Post a Comment