Friday 10 December 2010

চল্লিশ টাকা চালের কেজি অস্বাভাবিক নয় : এরশাদ : ১/১১’র অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে দেশ

সংসদ রিপোর্টার

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল সংসদে বলেছেন, পত্রিকায় আমরা প্রায় দেখি দ্রবমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটে চলেছে। থামানো যাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যে মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে। আমি মনে করি চল্লিশ টাকা চালের দাম এ মুহূর্তে অস্বাভাবিক নয়। চালে প্রতি কেজিকে দশ টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। একটা সরকারের পক্ষে কতদিন এই ভর্তুকি দেয়া যাবে সেটা জাতিকে জানাতে হবে।
ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ভোজ্যতেল আমরা কত টাকায় আমদানি করি। বাজারে কত টাকায় বিক্রি হয়। দেখলাম বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের গালাগালি করলেন। ভর্ত্সনা করলেন তেলের দাম বেড়ে গেল। তেলের দাম এভাবে বেঁধে দেয়া ঠিক নয়। দাম নির্ভর করবে আমদানির ওপর।
বিচারবহির্ভূত হত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এরশাদ বলেন, সন্ত্রাসী পুলিশের গুলিতে মারা যায়। বলা হয় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। একজন সন্ত্রাসীর জন্য ৪০ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, সেখানে তো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমরা আশাবাদী হয়েছি। তবে যানজট এমন একটা পর্যায়ে গিয়েছে বাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ১৮০ গাড়ি নামছে। এ গাড়ি চলবে কোথায়? ৪০ লাখ লোকের আবাসিক এলাকায় দেড় কোটি লোক বাস করছে। আর কিছুদিন পর ঢাকা বাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। উপশহর করলে যানজট কমবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, উপশহরের সবাই চাকরিবাকরি শিক্ষার জন্য ঢাকায় আসবে। এতে যানজট আরও বেড়ে যাবে।
এরশাদ তার প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তাবের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ঢাকার মতো কদর্য শহর আমি দেখিনি। ঢাকার এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া। প্রতিদিন ঢাকায় ২ হাজার ১৩৬ জন মানুষ আসে। তারা আর ফিরে যায় না। ঢাকার বাইরে চাকরি করলেও সরকারি কর্মচারীদের ৯০ ভাগ ঢাকায় থাকেন। তিনি বলেন, প্রাদেশিক রাজধানী করে ৭টা প্রাদেশিক সরকার করা গেলে যানজট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এটা করলে বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে মানুষ আপনাকে যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধা করবে।
বিএনপির সংসদ বর্জনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অদ্ভুত দেশ। নির্বাচনে হেরে গেলে সংসদে যাব না। অথচ সারাদিন গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি। গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সংসদে আসুন কথা বলুন। আমরা তার সমাধান করব। পরাজিত হয়েছেন, পরাজয় মেনে নিয়ে সংসদে এসে জনগণের পক্ষে কথা বলুন।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই। গণতন্ত্রকে রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করব।
তিনি বলেন, হরতাল করা গণতান্ত্রিক অধিকার। হরতার না করাও গণতান্ত্রিক অধিকার। হরতালের মতো দুষ্টচক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানাই সহযোগিতা করুন। আমরা পিছিয়ে রয়েছি। বিশ্ব এগিয়ে চলছে। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। সংসদ সফল হলে গণতন্ত্র সফল হলে আমরা এগিয়ে যাব।
নব্বইয়ের পরে কোনো সংসদ স্বাভাবিকভাবে শেষ হয়নি মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, আমরা এ সংসদকে স্বাভাবিকভাবে শেষ করব। মহাজোটে আছি, মহাজোটে থাকব। আমরা মহাজোট সরকারকে সফল করতে চাই।
ছিটমহল সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়ে এরশাদ বলেন, সিটমহলগুলো শাসন হয় অবাংলাদেশীদের দ্বারা। তাই যতদ্রুত সম্ভব এ ছিটমহল সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। এটা আমাদের সার্বভৌম বাংলাদেশের অংশ। কেন অন্যদের দ্বারা শাসিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেন্ট পিটার্সবার্গের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের জন্য আমরা গর্বিত। বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ডিগ্রি পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয় প্রধানমন্ত্রী যোগ্য নেত্রী। পারমাণবিক চুক্তি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের যে পদক্ষেপ শুরু করেছেন। এই চুক্তিতে জাতি আশান্বিত হয়েছে। আশা করি যাত্রায় কাজ শুরু হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
ওয়ান-ইলেভেনের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে দেশ
ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশ আবারও ওয়ান-ইলেভেনের পরিস্থিতির দিকে ফিরে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জনগণের মনে এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর গণতন্ত্র এখনও মুখে মুখেই রয়ে গেছে। গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় প্রাক্তন সৈনিক পার্টির সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
জাতীয় প্রাক্তন সৈনিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নিজাম উদ্দীন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মুহাম্মদ রাজু, সৈনিক পার্টির সমন্বয়ক কাজী মাহমুদ হাসান, সদস্য-সচিব মো. বেলাল হোসেন প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment