Monday 6 December 2010

চট্টগ্রামে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান : নগর ভবনে যুব ও ছাত্রলীগের হাতে মেয়র ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ



চট্টগ্রাম ব্যুরো

নগরীর অবৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে নগর ভবনে ঘেরাও এবং হামলা চালায়। একই সঙ্গে করপোরেশন কর্মীদের মারধর করে। তাদের হামলায় ৬ জন আহত হয়েছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা মেয়রকে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রেখে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের মারধর করে। ভাংচুর চালায় মেয়র ও ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষসহ কয়েকটি কক্ষে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতেই চলে এ তাণ্ডব। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ফরিদের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ফরিদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগের শতাধিক ক্যাডার জোর করে মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করে। তারা মেয়রকে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় ক্যাডাররা মেয়রের কক্ষের বাইরে ঘেরাও দিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। কয়েকবার চেষ্টা করেও মেয়র কক্ষ থেকে বের হতে পারেননি। ঘেরাওয়ের মুখেও মেয়র অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন কোনো চাপের মুখে অবৈধ কর্মকাণ্ড চলতে দেবেন না। তিনি যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিলবোর্ড ব্যবসা করার পরামর্শ দেন। এতে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে মেয়রের কক্ষের বাইরে অবস্থানরত ক্যাডাররা নগর ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুর শুরু করে। এ সময় তারা অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তারা মেয়রের কক্ষের জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলে। ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষটিও ভাংচুর করা হয়। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এ সময় বাধা দিলে ক্যাডাররা তাদেরকেও মারধর করে। এতে করপোরেশনের ছয় কর্মী আহত হন। এরা হলেন ফারুক, আবদুল লতিফ, ইসকান্দর, মনজুর আলম, ওয়াহাব ও রাকিব।
নগর ভবনে সন্ত্রাসী হামলার সময় কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও তারা নীরব থাকেন। পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা ভাংচুর ও হামলা চালায়। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলার খবর পেয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল সহকারে নগর ভবনে গিয়ে মেয়রকে মুক্ত করার চেষ্টা চালান। এ সময় নগর ভবনে উভয়পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ অবস্থায় পুলিশের সহায়তায় প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মেয়র তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। পরে ছাত্রদল ও যুবদল নেতারা মেয়র মনজুর আলমকে নিয়ে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নগর ভবন ত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগরী বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত অবৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রথম দফায় নগরীর অর্ধলক্ষাধিক অবৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণ করা হবে। দ্বিতীয় দফায় যেসব বৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড স্থাপনে নীতিমালা মানা হয়নি সেগুলোও সরানো হবে। এ লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে নগরীর ২নং গেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে স্থাপিত ছয়টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়। এর প্রতিবাদে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নগর ভবনে হামলা চালায়।
অবৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণ অভিযানের চসিকের ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালেহ আহমেদ বলেন, এ অভিযান যে কোনো মূল্যে সফল করা হবে। অবৈধ এবং বৈধ সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ক্রমান্বয়ে অপসারণ করা হবে। তিনি জানান, নগরীর ২নং গেট এলাকায় অবৈধ এবং অনুমোদনবিহীন ছয়টি বিলবোর্ড অপসারণ করার আধঘণ্টার মধ্যেই এরা নগর ভবন ঘেরাও করে।
নগর ভবন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড নীতিমালা অমান্য করে চট্টগ্রাম নগরীতে যত্রতত্র সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর বেশিরভাগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। তাছাড়া এসব অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে একদিকে নগরীর সৌন্দর্যহানি ঘটছে, অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। তারচেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দুটি খেলা চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। এসব বিবেচনায় এনে নগরীর সব অবৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণ শুরু করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে বৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড রয়েছে ১ হাজার ৭৬৪টি। অবৈধ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড রয়েছে অর্ধলাখের বেশি। সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের প্রধান জানান, নগরীর অপরিকল্পিতভাবে সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড সরানোর লক্ষ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে কোনো সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অনুমোদন এবং নবায়ন করা হয়নি। সিটি করপোরেশন প্রথমে নগরীর সব ধরনের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণের পর কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে কোন কোন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর চট্টগ্রাম নগর ভবনে হামলা ও মেয়রকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরবাসী মেয়র হিসেবে মনজুর আলমকে ন্যায়নিষ্ঠা, সততার সঙ্গে এবং দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন পরিচালনার জন্য ভোট দিয়েছেন। তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ এবং বিলবোর্ডসহ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার যখন উদ্যোগ নিয়েছেন তখন বর্তমান সরকারের টেন্ডারবাজ যুবলীগ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম, মেয়র অফিস ঘেরাও এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে। চট্টগ্রামবাসী কখনও এসব মেনে নেবে না। গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তা সরকারের দেশ পরিচালনারই প্রতিচ্ছবি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে একটি সুন্দর নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে করপোরেশনের কার্যক্রম সফল করতে সরকারি পেটুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ইউনিয়ন নগরীর চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের করপোরেশনের কাজে বাধা প্রধান ও কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও শ্রমিক দল নগর কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আবু তৈয়ব, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে নগর ভবনে হামলা, মেয়র কার্যালয়ে ভাংচুর এবং করপোরেশনে হামলাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে তারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

No comments:

Post a Comment