Friday 10 December 2010

আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ



স্টাফ রিপোর্টার


চলতি ২০১০ সালে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা অব্যাহতভাবে চলছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিচারবহির্ভূতভাবে ১১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নারীদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৮ জনকে জীবন দিতে হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৫৬ জন সাংবাদিক। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে রয়েছে অস্বচ্ছতা। দুদকের ক্ষমতা কমাতে আইন সংশোধন করেছে সরকার। ২০১০ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা রিপোর্টে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় বছরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক। বাসভবনে দম্পতি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা এবং মেধাবী ছাত্রদের মৃত্যু, ছিনতাইকারীর হাতে গণমাধ্যম কর্মী খুন, সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদাহরণ। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৯০ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে বারবার ঘোষণা দিলেও তা অব্যাহতভাবে চলছে। গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১৭ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া নতুন যোগ হয়েছে গুপ্ত হত্যা; যা খুবই উদ্বেগজনক।
নারীদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়, চলতি বছর বখাটেদের নারী উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। সরকার ও প্রশাসন থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকলেও এ তত্পরতা বন্ধ হয়নি। এমনকি প্রতিবাদকারীরা বখাটেদের রোষানলে পড়েছে। এক্ষেত্রে নাটোরে কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরে মা চাঁপারানী ভৌমিকের মৃত্যু ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। নভেম্বর পর্যন্ত নারী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৮ জনকে জীবন দিতে হয়েছে। বিচার বিভাগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পর্যালোচনা রিপোর্টে বলা হয়, বিচার বিভাগের কাজকে মসৃণভাবে চালানোর জন্য সরকার নিম্নআদালতে বেশকিছু বিচারক নিয়োগ দিয়েছে। তবে হাইকোর্টে ২ জন বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা স্বচ্ছভাবে না মেনে দলীয় নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রিপোর্টে বলা হয়, বিচার ব্যবস্থার প্রচলিত নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেশকিছু দুর্নীতি মামলা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যতগুলো মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে সবই ছিল সরকারদলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে। দেশের রাষ্ট্রপতির নাটোরের গামা হত্যাকাণ্ডের আসামিদের তথা শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের শাস্তি মওকুফের ঘটনা ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। দেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়, চলতি বছর ১৫৮ জন সাংবাদিক সরকারদলীয় নেতাকর্মী-ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা এবং দৈনিক আমার দেশ বন্ধের চেষ্টা, সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ করার ঘটনা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সরকারি অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ সংশোধনে সরকারি উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে রিপোর্টে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষমতা কমিয়ে আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর সংশোধনী মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। এই সংশোধনী গৃহীত হলে সরকার কমিশনকে স্বাধীন এবং কার্যকর করার যে অঙ্গীকার করছে তা পূরণ হবে না এবং কমিশনের কার্যপরিধি সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি এর ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার হবে। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের হঠাত্ পদত্যাগে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। হরতাল পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়, চলতি বছর বিরোধী দল দু’দিন হরতাল পালন করেছে। হরতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং হরতালের আগে গণগ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে বিরোধী দল ভীতি তৈরির জন্য ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং এই অঞ্চলে সহিংসতা চলছে। সারা বছরই দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুত্ পরিস্থিতি নাজুক ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠন, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু, শিক্ষানীতি অনুমোদন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছে পর্যালোচনা রিপোর্টে

No comments:

Post a Comment