Tuesday 7 December 2010

বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া : বাকশালে ফেরার ঘোষণা অশনিসঙ্কেত : জনগণ মেনে নেবে না : বাকশালের শেষ পরিণতি কী হতে পারে মানুষ দেখেছে

জাকির হোসেন

বাকশাল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যকে বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, হানিফের এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় দেশে আবার বাকশাল বা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলতে পারে। তবে জনগণ বাকশাল মেনে নেবে না। কারণ বাকশালের চিন্তাচেতনা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তারা আরও বলেন, বাকশালের শেষ পরিণতি কী হতে পারে তা অতীতে আমরা দেখেছি। সেই রকম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার আয়োজন করার চিন্তা যদি আওয়ামী লীগ করে থাকে তাহলে বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। এটা করতে হবে সম্পূর্ণ প্রচলিত আইন ব্যবস্থার বিপরীতে। সেই নতুন অবস্থান আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে কিনা জানি না। গতকাল পৃথক প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক আমার দেশকে তারা এ কথা বলেন।
প্রবীণ সাংবাদিক, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও ছড়াকার ফয়েজ আহ্মদ বলেন, গত কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা পার্টির ভবিষ্যত্ সম্পর্কে নানা মন্তব্য করে আসছেন। এবার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বাকশালের চিন্তাচেতনাকে আমরা এখনও ধারণ করি। সব দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে বাকশালের চিন্তাচেতনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে চাই।’ তার এ বক্তব্য সাধারণ দৃষ্টিতে আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারণ এর শেষ পরিণতি কী হতে পারে তা অতীতে আমরা দেখেছি। সেই জাতীয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার আয়োজন করার চিন্তা যদি তারা করে থাকেন তাহলে বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন সাধন করতে হবে। এটা করতে হবে একান্তই প্রচলিত আইন ব্যবস্থার বিপরীতে। সেই নতুন অবস্থান আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে কিনা জানি না।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, এ বক্তব্য দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত। দেশে আবার বাকশাল বা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলতে পারে। জনগণ বাকশাল মেনে নেবে না। তরুণ প্রজন্ম গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসী। যদিও তারা বাকশালের শাসন প্রত্যক্ষভাবে দেখেননি। তবু গণতন্ত্রকামী এ প্রজন্ম বাকশাল মানবে না। এতে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হবে, যা দেশ ও জনগণের জন্য শুভ হবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও শুভ হবে না।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাকশাল হলো—বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, যা মূলত একদলীয় শাসন ব্যবস্থা। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল বাকশাল। বাকশালের চিন্তাচেতনা ধারণ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতে। তাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে বাকশালকে ঘৃণা করা ছাড়া উপায় নেই।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের মূল কথা হলো, আওয়ামী লীগ একদলীয় চিন্তাচেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা এবং আধুনিক গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনায় তারা বিশ্বাস করে না। এটা তারা প্রকাশ না করলেও মনের দিক থেকে তারা স্বৈরতান্ত্রিক। এ কারণে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে এবং জনজীবনের নাভিশ্বাস উঠেছে। এটা করা হলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে।

No comments:

Post a Comment