Tuesday 7 December 2010

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করলেন আ’লীগ নেতা



বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সর্দারকে (৬৫) প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেছেন। সোমবার বিকালে শহরের শ্রমিক কলোনির সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর ভয়ে মংলায় চিকিত্সাসেবাও নিতে পারেননি। তার বাড়ি সুন্দরবন ইউনিয়নের মাদুরপাল্টা গ্রামে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পেলে জেলার মুক্তিযোদ্ধারা আসন্ন বিজয় দিবসের সব কর্মসূচি বর্জন করবেন বলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার জানান। লাঞ্ছিত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর সর্দার জানান, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মংলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে বের হয়ে মংলা শ্রমিক কলোনির সামনে পৌঁছলে উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ইজারাদার আমার সামনে এসে মোটরসাইকেল থামিয়ে পথরোধ করে দাঁড়ান। এ সময় আমার সঙ্গে মংলার আর এক মুক্তিযোদ্ধা ও আইন সহায়তা কেন্দ্র মংলার সভাপতি মো. আ. রাজ্জাক ছিলেন। এরপর আমাকে গালাগাল করে শত শত লোকের সামনে প্রকাশ্য পায়ের জুতা খুলে আমাকে মারতে থাকেন। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যাই। এরপর চেয়ারম্যান মোটরসাইকেলে চলে যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যান, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকতে এই পাঁচ বছর যেন তোকে মংলায় আসতে না দেখি।’ তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে জাতি আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশের জন্য যুদ্ধের সময় পায়ে মর্টার শেল লাগার কারণে আমি এখনও ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। অথচ প্রকাশ্যে চোরের মতো আমাকে জুতাপেটা করা হলো। এ যে কি লজ্জা! কি অপমান! আর আপনাদের এ ঘটনা জানানোর পর এলাকায় থাকতে পারব কিনা তা জানি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটতে দেখলেও নিরাপত্তার ভয়ে বাধাও দিতে পারিনি। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে এখন লজ্জা লাগছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অবশেষে সন্ধ্যায় তার বাসার ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও তিনি সোমবার থেকে অসুস্থ বলে জানানো হয়।
এদিকে বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার শাহিনুল হক সানা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সত্যতা নিরূপণ সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার না হলে জেলার সব মুক্তিযোদ্ধা আসন্ন বিজয় দিবসের কর্মসূচি বর্জন করবেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আকরাম হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি সম্মুখ অবগত নন। খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে

No comments:

Post a Comment