স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়, তারা ওই সময় পর্যন্ত দেশেই অবস্থান করা নিরাপদ মনে করেছিলেন। ১২ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী এ দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তারপরও ১৪ ডিসেম্বর কারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল, স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও জাতি তা জানতে পারল না। তিনি বলেন, আওয়ামীলী অনেক বড় বড় কথা বলে। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা সাড়ে ৩ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে এ নিয়ে একটি মামলাও করেনি। মামলা হয়েছে ২৫ বছর পর ১৯৯৭ সালে। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ, অন্য কেউ তো ছিল না। তারপরও মামলা করতে সমস্যা কোথায় ছিল? তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুরে হারিয়ে যান। তখন এ দেশের দায়িত্ব কার হাতে ছিল? পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের এত দিন পর জহির রায়হান নিখোঁজ হলেন কেন? তিনি বলেন, প্রতিবছর দিবস এলে অনুষ্ঠান করে, শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়া আর কান্নাকাটি করে একদিকে যেমন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের খাটো করা হয়েছে, অন্যদিকে হত্যাকারীদের আড়াল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী সময়ও ক্ষমতায় ছিল। তারপরও বিচার না করার কারণ তাদের জাতির সামনে অবশ্যই একদিন বলতে হবে। হয় এর বিচার তারা করেনি অথবা এর পেছনে শক্তিশালী কোনো দেশ থাকায় তারা বিচারের সাহস পায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল বিকালে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে পুরানা পল্টনের মহানগর অফিস চত্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপির সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল ও সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম।
এটিএম আজহার সাভারে গার্মেন্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, দেশ সবার। এ দেশের শিল্প-কারখানার ক্ষতি হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, দেশের রফতানি আয়ের ৭০-৮০ ভাগ আসে গার্মেন্ট সেক্টর থেকে। মুখস্থ কথা না বলে, কাউকে দোষারোপ না করে, কারা এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই দেশের পাটকলগুলোতে আগুন দিয়ে সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচালিত পাটকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। সেই আওয়ামী লীগই এখন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গার্মেন্ট কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটছে। তিনি উল্লেখ করেন, ৭২-৭৫ সালে পাট শিল্পকে যেমন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, বর্তমানেও গার্মেন্ট সেক্টরকে ধ্বংসের জন্য গভীর চক্রান্ত চলছে। সব রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে ওঠে, সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকরা বলেন, এসবের সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত না। বাইরের লোক জড়িত। এই বাইরের লোক কারা? সরকার এত কিছু বের করতে পারে, এই বাইরের লোকদের কেন বের করতে পারে না? এখানে সরকারের কী কোনো দুর্বলতা আছে? তিনি নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, না হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
আজহারুল ইসলাম বলেন, ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিলেন, তারা ভারতে যাওয়া নিরাপদ মনে করেননি। ভারতের মাটিতে যুদ্ধ করাও পছন্দ করেননি। স্বাধীনতার পর তাদের তাঁবেদারি মেনে নিতে পারত না, মনে করেই হয়তো বৃহত্ শক্তি তাদের হত্যা করতে পারে। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের নামে ব্যক্তি বা দল বিশেষ নিয়ে কুত্সা রটানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইতিহাসকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যাবে না। সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। তিনি জহির রায়হানেরর পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃৃতি তুলে ধরে বলেন, জহির রায়হান একজন ভারতীয় ব্রিগেডিয়ারের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর আর ফিরে আসেননি। তিনি বলেন, জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়ার জন্য যারা দায়ী, তারাই ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা জড়িত, তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন।
জামায়াত নেতা বলেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির সম্পদ। তারা জাতির কল্যাণে কাজ করে থাকেন। তারা জাতির কল্যাণে যখন যা বলা প্রয়োজন তা বলে থাকেন। তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের সময় আমরা দেখেছি, অনেক বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বিতরণ করেছেন। তারা আজ কোথায় হারিয়ে গেছেন? তাদের বুদ্ধি কী লোপ পেয়েছে? তারা কী অন্য কোথাও বিক্রি হয়ে গেছেন? না কি সরকারের অত্যাচারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন? তিনি বলেন, ইভটিজিং চলছে, ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়ে দেয়া হচ্ছে, বন্দর অবাধে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, প্রতিদিন গড়ে ১১ জনের বেশি খুন হচ্ছেন, কোনো বুদ্ধিজীবীকে তো বিবৃতি দিতে দেখা যাচ্ছে না। বুদ্ধিজীবীর নামে বুদ্ধি বিক্রি করে দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা পিণ্ডির গোলামির পরিবর্তে দিল্লির গোলামি চাননি। কিন্তু বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেই স্বাধীন অস্তিত্বে আঘাত হানা হচ্ছে। তাই যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায় না তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় জহির রায়হানকে গুম করা হয়। এটা ছিল প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। এ দেশকে ভারতের পদানত রাখার জন্যই এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment