Monday 2 August 2010

সীমান্তপথে দেদার আসছে মাদক




ডেস্ক রিপোর্ট
দেশের সীমান্তপথে ভারত থেকে অবাধে আসছে মাদকদ্রব্য। এসব মাদকদ্রব্যে সয়লাব হয়ে উঠেছে হাট-বাজার। সহজলভ্য হয়ে উঠেছে ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, নারায়ণ, গোলাপ, বাংলা মদ, স্পিরিট, হুইস্কিসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সীমান্তপথে নিয়ে আসছে এসব মাদকদ্রব্য। এসব মাদকের নীল দংশনে অবক্ষয় ঘটছে আমাদের যুবসমাজের। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
হাকিমপুর (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের হিলি ও জয়পুরহাটের সঙ্গে ভারতের প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আর এসব সীমান্তের বিপরীতে ভারতীয় ফেনসিডিলের অন্তত ২০টি অবৈধ কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। কারখানাগুলো সীমান্তের অদূরে লোকালয়ে ও বাড়িতে গড়ে উঠেছে। তবে বিডিআর কর্মকর্তারা সীমান্তের ওপারে পাঁচটি কারখানার কথা স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশে ফেনসিডিল পাচারের উদ্দেশ্যেই এসব কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১০০ মিলিমিটারের বোতলের পাশাপাশি এখন ৫০ মিলিমিটার বোতলেও ফেনসিডিল পাওয়া যাচ্ছে। বোতলের গায়ে হিমাচল, ব্যাঙ্গালোর, কলকাতা ও লক্ষেষ্টৗ লেখা থাকলেও মূলত ফেনসিডিলগুলো স্থানীয়ভাবেই তৈরি হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই মাদক ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব ফেনসিডিল পাচার করে আনছে।
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) : কলারোয়া সীমান্তে চোরাচালান তত্পরতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে সীমান্ত প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলেছে সচেতন মহল। আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চোরাচালানিদের কাছ থেকে উেকাচ গ্রহণ করছে প্রশাসন। সূত্র জানায়, কলারোয়ার পশ্চিমে ১৭ কিলোমিটার এলাকা সীমান্তপথ। এ সীমান্তের ওপার থেকে ভারতের কলকাতা শহরসহ বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন শহরের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় চোরাচালানিদের নিরাপথ রুট হিসেবে কলারোয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জ ৮ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের বালিয়াঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির একটি টহল দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর বাজার সংলগ্ন পাটলাই নদীতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় চোরাই কয়লা লোড করার সময় ৯ মেট্রিক টন অবৈধ মিনি পাসবিহীন চোরাই কয়লা, ৬ বোতল ভারতীয় অফিসার্স চয়েজ মদের বোতলসহ একটি ইঞ্জিন নৌকা আটক করেছে। আটক নৌকা, কয়লা ও মদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২শ’ টাকা।
বিয়ানীবাজার (সিলেট) : বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন গ্রামে দেদার মাদক বিক্রি হচ্ছে। গ্রামে মাদকের ভয়াবহতায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ক্রমেই মাদক বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। অভিনব পন্থায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাদক বিক্রেতারা তাদের লাভজনক এ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিক্রি করে যুবসমাজকে বিপথগামিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এসব মাদক বিক্রেতা। তাদের কারণে এলাকায় অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার ৩৫ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা গতকাল পৃথক তিনটি অভিযান চালিয়ে ৭শ’ ৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।
বিডিআর জানায়, গতকাল ভোরে নিমতলা বিডিআর ক্যাম্পের হাবিলদার আবদুস সালাম সঙ্গীয় জওয়ানদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বহুল আলোচিত ফেনসিডিলের প্রকাশ্য খোলাবাজার নামে খ্যাত আকন্দবাড়িয়া থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪৬৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে।
এছাড়া বিডিআর দামুড়হুদার জয়নগর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৯২ বোতল ও দর্শনা থেকে ৫৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। তবে এসব অভিযানে কাউকে আটক করতে পারেনি বিডিআর।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য। উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের দেবপুর, দেবনগর, আলীনগর, শিয়ালউড়ি, আমবাড়িয়া, নিজনগর, ধর্মঘরবাজার, হরষপুরবাজার, কালীরবাজার, চৌমুহনী ইউনিয়নের তুলসীপুর, রাজনগর, হরিণখোলা, কমলপুর, কমলানগর, বহরা ইউনিয়নের মনতলা তেমুনিয়া সংলগ্ন এলাকা, রাজেন্দ্রপুর, আদাঐর, জগদীশপুর, শাহজাহানপুর, আন্দিউড়া, বুল্লা, ছাতিয়াইন, নোয়াপাড়া, বাঘাসুরা ইউনিয়ন ও উপজেলা সদরের গঙ্গানগর, পুরনো হাসপাতাল কোয়ার্টার, কৃষ্ণনগর, পশ্চিম মাধবপুর, কাটিয়ারাসহ বিভিন্ন স্থানে মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রবের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী। সেখানে দেশীয় মদ থেকে বিদেশি মদ, ফেনসিডিল, গাঁজা—সবকিছুই হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। সহজে কম মূল্যে মদ পাওয়ায় অনেক নিম্নআয়ের মানুষও মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। আবার অনেক সময় মাদক ক্রয়ের অর্থ জোগাড় করতে মাদকসেবীদের অন্যায়ভাবে টাকা রুজি করতেও শোনা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরা পড়ছে মাদকদ্রব্য। অপরদিকে উপজেলার চা-বাগানগুলোতে চোলাই মদ তৈরি করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার সর্বত্র পাচার করা হচ্ছে।
পাইকগাছা (খুলনা) : উপজেলার মাদকের খনি হিসেবে পরিচিত কাশিমনগর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ২১ বোতল ফেনসিডিলসহ এক ফেনসিডিল বিক্রেতাকে আটক করেছে ফাঁড়ি পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কপিলমুনি ফাঁড়ি পুলিশ কাশিমনগর গ্রামের আজাহারুল গাজীর ছেলে রাসেল গাজীকে তার বাড়িতে আটক করে। এসময় পুলিশ তার কাছ থেকে এক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে তাদের মুরগির ঘর থেকে আরও ২০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। কপিলমুনি অঞ্চলের মাদক সিন্ডিকেটের একজন নতুন সদস্য বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
জয়পুরহাট : র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিলসহ মাইক্রোবাস আটক করেছে। গত রোববার গভীর রাতে র্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্যরা বাংলা হিলি সীমান্তের হিলি মোড়ের নর্দার্ন প্যালেস আবাসিক হোটেলের গ্যারেজ থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার ৪০৯ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি মাইক্রোবাস আটক করে। মাইক্রোবাসের চালক ও মালিক পলাতক রয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/03/37124

No comments:

Post a Comment