Monday 2 August 2010

পাউবোর অপরিকল্পিত প্রকল্পে দুর্নীতি : দু’মাসেই কুয়াকাটায় ৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে



মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি ও অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে মাত্র দু’মাসের মধ্যে সরকারের ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বিলীন হওয়ার পথে কুয়াকাটা রক্ষা বাঁধের খাজুরা-মাঝিবাড়ি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। এরই মধ্যে এ বাঁধের দুই-তৃতীয়াংশ সাগরের ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধের অভ্যন্তরের ১০ সহস্রাধিক মানুষের নিরাপত্তা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮ নং পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের খাজুরা-মাঝিবাড়ি পয়েন্টটি সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটা এবং ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় সাগর থেকে ফুঁসে ওঠা জলোচ্ছ্বাসে বাঁধের ওই পয়েন্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড় আইলায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধের ওই পয়েন্ট। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও পাউবো কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে নির্মাণের দু’মাসের মধ্যেই ভয়াবহ ফাটল ধরে। গত দু’মাসে সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় পশ্চিম পাশের বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ মিটার এলাকায় মূল বাঁধসহ প্রায় ৭০ ভাগ সাগরের উত্তাল ঢেউ গিলে খেয়েছে। ভাঙনের নির্মমতা ক্রমে বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকার শত শত মানুষ জানান, বাঁধের যে অবস্থা তাতে যে কোনো সময় এ বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা পানিতে প্লাবিত হতে পারে। ফলে গৃহহারা হয়ে পড়বে বাঁধের ভিতরের প্রায় কয়েক হাজার পরিবার। হুমকির মুখে রয়েছে কোটি কোটি টাকার আবাসিক হোটেলসহ পর্যটন কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এ এলাকার একাধিক মানুষ অভিযোগ করেন, ‘কুয়াকাটা রক্ষা বাঁধের ওই পয়েন্টটি হচ্ছে সাগর মোহনায়। ফলে সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় একই পয়েন্ট বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাঙন রোধের জন্য সিসি ব্লক তৈরি নিয়মমাফিক করা হয়নি।
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও বাঁধের স্লোপ (ঢাল) সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তখন একই প্রকল্পের এই প্যাকেজে কলাপাড়া পৌর শহর রক্ষার জন্য শহর লাগোয়া আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে ১৫০ মিটার এলাকায় সিসি ব্লক ফেলা হয়, যা না করে মাঝিবাড়ির চরম ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পশ্চিম দিকে আরও অন্তত ১০০ মিটার বাঁধ রক্ষার জন্য সিসি ব্লক দেয়ার কাজ করা ছিল খুব জরুরি, যা করা হয়নি। ফলে ওই পয়েন্ট দিয়ে আবার সাগরের ঢেউয়ের তাণ্ডবে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। গত শুক্র ও শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাঁধের বেহাল দশা। মূল বাঁধের স্লোপ দুই সপ্তাহ আগেই সাগরের উত্তাল ঢেউ গিলে খেয়েছে। টপসহ মূল বাঁধের ৭০ ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। ফের অমাবস্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার আঘাত হানলে কী হবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। এরা সবাই চরম উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশল বিভাগের দেয়া তথ্যমতে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় করে লতাচাপলী ইউনিয়নের পর্যটন এলাকায় ৩২০ মিটার বাঁধ এবং কলাপাড়া পৌর শহর রক্ষা প্রকল্পের ১৫০ মিটার প্রটেকশনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। দুই সাইজের সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে প্রটেকশনের কাজ করা হয়। ১৩ মণ ২০ কেজি ও ৯ মণ এই দুই ধরনের ব্লক দিয়ে কাজ করা হয়।
মেলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল খালেক জানান, এই কাজ শেষ হওয়ায় ভয় কেটে যায়। কিন্তু আর ১০০ মিটার বাঁধ একই সময় সংরক্ষণ করা হলে এ বছর নিরাপদে থাকতে পারতাম। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বাঁধ সাগরের ঢেউয়ের তাণ্ডবে ভাঙতে শুরু হলে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কুয়াকাটাবাসী।
এ ব্যাপারে পাউবোর কলাপাড়া উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এরই মধ্যে খাজুরা-মাঝিবাড়ি পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে ৮৪০ মিটার ও মিরাবাড়ি পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে ৫৪০ মিটার ভাঙন রোধে নতুন করে দরপত্রের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। শিগগিরই কার্যাদেশ দেয়া হবে। তৈরি করা ব্লকের নিম্নমানের বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ ভালোই হয়েছে। বেশি লবণাক্ততা ও ঢেউয়ের ঝাপটায় ব্লকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/03/37227

No comments:

Post a Comment