Monday 7 June 2010

ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা


কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গতকাল কমিটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে ইবি ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিন গতকাল সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে স্থান না পাওয়া আলী মোর্তজা খসরু, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জার গিফারী গাফফার নেতা-কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে সংঘবদ্ধ হন। অন্যদিকে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীরাও সংঘবদ্ধ হন। দুপুর ১২টার দিকে উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা, পিস্তল, রামদা ও চাপাতি নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চলে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন। এ সময় ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করে। সংঘর্ষ চলার সময় দুটি গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় খুলনা-ঢাকা মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ২টার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিতে জাহাঙ্গীর হোসেনকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয় গত ১৯ মে। এ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অছাত্র এবং পেশাজীবী বলে অভিযোগ উঠলে গত ২২ মে আওয়ামী লীগের কার্যকরী সংসদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ কমিটি বিলুপ্ত করা হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে ২৩ মে থেকে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়েই দুই গ্রুপে উত্তেজনা শুরু হয়।
বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জার গিফারী গাফফার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শেখ হাসিনার নির্দেশেই বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। আমরা এ কমিটি মানি না।'
অন্যদিকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন বলেন, 'ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলাম। এ সময় কতিপয় ছাত্রলীগ নেতা বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা তা প্রতিহত করি।'
প্রক্টর মাহবুব আরেফিন গতকাল রাত দেড়টায় কালের কণ্ঠকে জানান, দুই ঘণ্টাব্যাপী সিন্ডিকেটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আপাতত ১৪ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরবর্তী সময়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন বলেন, ঘটনা তদন্তে ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। তারাই এর সমাধান দিতে পারবে। সহিংসতা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শাবিপ্রবিতে হাতাহাতি: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক ছাত্রকে হলে ওঠানো নিয়ে ছাত্রলীগের সুমন গ্রুপ ও আসাদ-মিঠু গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে সুমন গ্রুপের আবু সালেহের সঙ্গে আসাদ-মিঠু গ্রুপের ইকবালের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে সিনিয়র নেতা-কর্মীরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
অন্যদিকে আসাদ-মিঠু গ্রুপের নেতা-কর্মীরা অর্থনীতি বিভাগের আব্দুর রহিম নামের এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করেছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ব্যক্তিগত কারণে এমনটি হয়েছে, এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

http://dailykalerkantho.com accessed on 07/06/2010

No comments:

Post a Comment