Monday 14 June 2010

যাত্রাবাড়ীতে খুন



রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর উত্তর কুতুবখালীতে গতকাল রোববার দিন-দুপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রিংকু (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় ফুয়াদ ফয়সাল জন (২৪) ও স্বপন নামে দু'জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত স্বপনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উত্তর কুতুবখালী মসজিদের গলিতে আবুল মুন্সীর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। রিংকুর স্বজনদের অভিযোগ, বাড়ি দখল করতে না পেরে সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রিংকুকে খুন করেছে। আর
পুলিশ দাবি
করছে, নিহত রিংকু, গুলিবিদ্ধ স্বপন এবং জন পুরান ঢাকা ও যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা
নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বপনকে গুলির পর জিহ্বা কেটে দেয় সন্ত্রাসীরা। পুলিশ গুলিবিদ্ধ স্বপনকে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সময় তার পকেট থেকে একটি ককটেল উদ্ধার করে।
নিহত রিংকুর ভগি্নপতি নাহিদ হাসান নান্নু সমকালকে বলেন, রিংকুর বাবা রিয়াজুল ইসলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারা ৪ নম্বর হাটখোলা রোডে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বরাদ্দ দেওয়া একটি বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন। বাবার মৃত্যুর পর পাশের বাড়ির লোকজন রিংকুদের বাড়িটি দখলের পাঁয়তারা করছে। তারাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর আগেও রিংকুকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ নিয়ে রিংকুর পরিবার যাত্রাবাড়ী থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল। নাহিদ হাসান জানান, গতকাল সকালে জন রিংকুকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মুদি দোকানি জামাল উদ্দীন জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে দোকানের দিকে যাওয়ার সময় তিনি হঠাৎ দেখতে পান ৭-৮ জন যুবক দৌড়ে আসছে। এক পর্যায়ে সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবক পিস্তল উঁচিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঠিক তখনই জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিহিত আরেক যুবক কালো রঙের একটি পিস্তল দিয়ে পেছন থেকে একজনের মাথায় গুলি করে দ্রুত চলে যায়। গুলিবিদ্ধ যুবকরা লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান এক যুবক মারা গেছে। গুলিবিদ্ধ অপর দু'জন কাতরাচ্ছে। তারা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে নিহত রিংকুর লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রিংকু স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চলাফেরা করত। ইদুল গ্রুপের সন্ত্রাসীদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া রিংকু, স্বপন ও জন কেন নিজেদের এলাকা সূত্রাপুর ছেড়ে এই এলাকায় এসেছে তা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে সন্ত্রাসী ইদুল কারাগারে রয়েছে। তার অবর্তমানে সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে ইদুলের ক্যাডার সাগর ও সবুজের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। স্বপন, জন ও রিংকু সবুজের সঙ্গে চলাফেরা করত। এটা সহ্য করতে পারেনি সাগর। তাই কৌশলে ডেকে এনে এদের খুন ও আহত করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ জনের বাসা ৪/১ হাটখোলা রোডে রিংকুর বাসার পাশে। জনের বাম হাতে ও বাম পায়ে দুটি গুলি লেগেছে। তার বাবার নাম আবু ফাত্তাহ কামাল। তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। গুলিবিদ্ধ অপর যুবক স্বপনের বাবার নাম চুন্নু মিয়া। তাদের বাসা আলুবাজারের সিদ্দিক বাজার। তার চোখে গুলি লেগেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েক রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোক্তার সমকালকে বলেন, সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রিংকুকে গুলি করেছে। গুলি তার মাথার একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে পাশের বাড়ির একটি লোহার জানালায় বিদ্ধ হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আবুল মুন্সীর বাড়ির একটি জানালায় বুলেটের চিহ্ন। ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ। নিহত রিংকু, গুলিবিদ্ধ স্বপন ও জন জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ কারণে আশপাশের টিনের বেড়া ও ইটের দেয়ালে রক্তের দাগ লেগে যায়।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&option=single&news_id=72326&pub_no=366

No comments:

Post a Comment